Thursday, July 30, 2020

মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন ছেলে |||||| Post By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor
লেখক মোঃ ফিরোজ হোসেন ফাহিম ইসলাম




   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor

- কিরে তোদের নাকি অনলাইনে ক্লাস হয়?? বাড়ির উঠানে চেয়ার এর উপর হেলান দিয়ে আশপাশটা তাকিয়ে দেখছিলাম! বন্যার কবলে পড়ে আমাদের পুরো এলাকা কিভাবে তলিয়ে গেছে, চারিপাশে শুধু পানি আর পানি।ছোট ছোট ডেঙি নৌকা দিয়ে মানুষ এপার ওপার হইতাছে !কেউকেউ জাল দিয়ে মাছ মাড়ছে, আবার কেউকেউ বাঁশের পুল দিয়ে পা টিপেটিপে পাড় হচ্ছে, পানির দৃশ্যটা দেখতে সত্যি-ই অসাধারণ লাগছিল! আমি সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ নিয়ে আপনমনে তাকিয়ে দেখছিলাম! এমন সময় আব্বু এসে কথাটি বললেন, আব্বুকে দেখামাত্র আমি দ্রুতগামী চেয়ার ছেড়ে উঠে বসলাম!কিন্তু আব্বুর প্রশ্নের কোন প্রত্যুত্তর দিলাম না! শুধু তার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। আব্বু আমার নীরবতা দেখে আবার বললেন, . --কিরে কিছু বললি না যে, . অনিচ্ছা সত্যেও মুখ গোমরা করে আব্বুর প্রশ্নের উত্তরে বললাম,


   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor



--হলে হোক, তাতে আমি কি করবো ??(আমি) .
-- কি করবি মানে? তুই পড়বি না?(বাবা) .
--পড়তে চাইলে-ই কি পড়া যায়?(আমি) .
--এভাবে কথা বলছিস কেন? না পড়লে তো পরিক্ষার খাতায় ঘোড়ার ডিম পাবি(রাগি স্বর নিয়ে) .
--পেলে পাবো তাতে তোমাদের কি আসে যায়?(গাল ফুলিয়ে কথাটি বললাম) আমি কথাটি বলার পর-ই আব্বুর দিকে আড়-চোখে তাকিয়ে দেখলাম, উনি আমার দিকে ভয়ংকর ভাবে চেয়ে আছে, হয়তো আমার মুখে এমন উত্তর শোনার জন্য উনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না!আমি মাথা নিচু করে আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম, আব্বু চোখ গরম করে ধমক দিয়ে বললেন, . --একটা থাপ্পড় মেরে মুখের সব কয়টা দাঁত ফেলে দিবো কি বলছিস এসব?(চরম রেগে গিয়ে) . আব্বুর ধমক খেয়ে আমি একদম চুপসে গেলাম, আমার পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো! কৃত্রিম কেঁপে উঠলাম! অতঃপর একটু জড়সড় হয়ে দাঁড়ালাম। আব্বু কিছুটা নীরবতা থেকে আবার বললেন....., . --তোদের স্যার ফোন দিয়ে ছিলেন আমায়, তোর নাকি তিন মাসের বেতন বকেয়া হয়ে গেছে,(বাবা) ধমক খাওয়ার পর মুখ দিয়ে কিছু বলার সাহস পেলাম না! শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে দিলাম! আব্বু আর কিছুই বললেন না!শুধু পাঞ্জাবির পকেট থেকে কাগজের বানানো সবচেয়ে অল্প দামের একটা বিড়ি বের করলেন!তারপর আমাকে বললেন, . -- তুই এখন এইখান থেকে যাহ(বাবা) আব্বু কথাটি বলে শেষ করারপর আমি আর একটুও দাঁড়িয়ে না থেকে সেখান থেকে চলে আসলাম! তারপর ঘরের এককোণে বসেবসে ভাবছিলাম, পৃথিবীতে হয়তো শুধু আমি-ই আছি, যার মনে কোন সুখ নেই! আমার মত দুঃখী মানুষ হয়তো এই দুনিয়াতে আর একটাও খুঁজে পাওয়া যাবে না! যে কিনা শুধু তিনবেলা দুই মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে আছে। যার অনেক সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই! যে প্রতি রাতে বড় বড় স্বপ্ন দেখতে চেয়েও পারে না! কারণ তার সেই স্বপ্ন কোনদিনও পূরণ হবার নয়! যার ইচ্ছে থাকা সত্যেও বন্ধুদের সাথে বেলা করে আড্ডা দিতে পারে না! কারণ তার মেলা কাজ পরে থাকে!যে কি না কোন অনুষ্ঠানে ভালো পোষাক পরিধান করতে পারে না! কারণ, তার সেই সামর্থ্য নেই! যার মুখের হাসিটা শুধু-ই অভিনয়, কারণ দুঃখটা তার জীবনের বাস্তব! এসব ভেবে ভেবে হঠাৎ চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু হলো! তড়িঘড়ি সেই পানি মুছে দিলাম! কারণ, এই চোখের পানি কোনদিনও আমায় সুখ ফিরিয়ে দেয়নি! যাইহোক দেখতে দেখতে একসময় বেলা গড়িয়ে রাতের অবস্থান হলো! টেবিলের সামনে চেয়ার টেনে পড়তে বসলাম! এমন সময় কোথা থেকে যেনো আব্বু এসে হাজির! হাতের মুঠোই একটা রঙিন ব্যাগ দেখা যাচ্ছে, আমি কিছু বলার আগেই আব্বু ব্যাগটা আমার সামনে এগিয়ে ধরলেন, এবং বললেন, . --এই নে এটা তোর জন্য এনেছি(বাবা)
আমি ভ্রু-কুঁচকে আব্বুর দিকে তাকালাম, তারপর কিঞ্চিত অবাক হয়ে বিস্ময় স্বরে বললাম, . --এটাতে কি আছে??(আমি) .

   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


আব্বু মুখে মিষ্টি হাসি হেসে বললেন, . --একবার খুলেই দেখ...(বাবা)
আমি আর কথা না বাড়িয়ে, আব্বুর কথা অনুযায়ী ব্যাগটা খুলতে শুরু করলাম। ব্যাগটা খুলারপর যা দেখলাম, তা দেখা মাত্রই আমি হাজার বোল্ড এর শর্ট খেলাম! নিজের চোখ -কেই যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার! আব্বু আমার জন্য ইয়া বড় নতুন মোবাইল সেট কিনে এনেছেন! সাথে নতুন চার্জ নতুন ইয়ারফোন! নতুন মোবাইল দেখে আমার খুশিতে নাঁচতে ইচ্ছে করছে!! আব্বু আমার মাঝে খুশীর আমেজ দেখতে পেরে, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ ফিরে পেয়েছন বলে মনে হলো! আমি খুশিতে মুচকি মুচকি হাসছিলাম, আর মোবাইলটি একটু নেড়েচেড়ে দেখছিলাম! এমন সময় আব্বু মুচকি হাসি দিয়ে আদুরে গলায় বললেন, . --কিরে তোর পছন্দ হইছে??(বাবা)
. আমি খুশিতে আব্বুর দিকে তাকাতেই লজ্জা পাচ্ছিলাম!তারপরও খুশিতে গদগদ হয়ে আব্বুকে বললাম, . --হুম অনেক অনেক পছন্দ হয়েছে, আব্বু এটার দাম কত নিয়েছে?(আমি) . -
-দাম জেনে তুই কি করবি? শুধু বল তুই খুশি হইছিস কি না?(বাবা) .
--অনেক অনেক খুশি হয়েছি আব্বু। কিন্তু, এটা চালাতে হলে তো একটা সিম কার্ড লাগবে(আমি) .
আব্বু আমার খুশি দেখে মুচকি হাসলেন, তারপর পকেট থেকে কি যেনো বের করতে করতে মিষ্টি কণ্ঠে বললেন,... . --ওটা নিয়ে ভাবতে হবে না!আমি সাথে করে নতুন সিম এবং নতুন মেমরি, সাথে,একমাসের এমবি ভরে এনেছি! প্রতিদিন এক জিপি করে এমবি শেষ করবি! আর মন দিয়ে পড়াশোনা করবি! পরিক্ষায় যেনো ভালো ফলাফল হয়! আমি চাই তুই একদিন পড়াশোনা করে আমাদের নাম করবি! সবার মুখে মুখে যেনো তোর নামটাই শুনি(বাবা)
আব্বু কথাগুলো বলারপর একটু দম নিলো, তারপর আবার বলতে লাগলো,... . --এতদিন তোর হাতে মোবাইল দেয়নি, কারণ মোবাইল তোর প্রয়োজন ছিল না। আর তাছাড়া একটা ভালো ছাত্রের হাতে মোবাইল থাকলে সে খারাপ হতে বেশিদিন লাগে না! সারাদিন মোবাইল নিয়ে-ই পরে থাকে, আমি চাই না তুইও ওদের মত হস! মোবাইল নিয়ে বেশি সময় নষ্ট করবি না! অবসর সময়ে মোবাইল চালাবি! আর মোবাইলে দেখা যায় এমন শিক্ষণীয় জিনিস বেশি বেশি দেখবি! তুই এখন মোটামুটি বুঝতে শিখেছিস।কোনটা ভালো কোনটা মন্দ এটা বুঝার বয়স তোর হয়েছে। আশাকরি তোকে কিছু শিখিয়ে দিতে হবে না! এখন আর সেই বয়স নেই যে, তোকে মারধোর করে শাসন করবো! সুতরাং- ভালো খারাপ বুঝে-ই চলিস বাবা!(বাবা) আব্বু কথাগুলো কয়েক নিঃশ্বাসে বললেন, তারপর আমার পাশ থেকে চলে গেলেন! আসলে ছোট থেকে অনেক বড় হয়ে গেছি, হিসাব করলে দেখা যাবে আমার বয়স বাইস পেড়িয়ে গেছে! বুঝতে শিখেছি অনেক আগে থেকেই, কিন্তু এই মানুষটাকে আমি কখনোই বুঝতে পারি না! ছোটবেলায় আব্বুর মুখে এই কথাটি অনেকবার শুনেছি, আব্বু বলতেন, আমার ফিরোোজকে পড়াশোনা করাতে যদি আমাকে নগরে ভিক্ষা করতে হয়, তবুও করবো! তারপরও আমার ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ! রাতের খাবার খেয়ে কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাতে লাগলাম! আচমকা কারো ফিসফিস শব্দে আমার কাঁচা ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো! এদিক ওদিক হাতিয়ে মোবাইলটি বের করে, পাওয়ার বাটনে ক্লিক করে সময়টা দেখলাম, তখন রাত বাজে একটা বেজে চৌদ্দ মিনিট.... কিন্তু আব্বু আম্মু ঘুমান নি! আম্মু ফিসফিস শব্দে আব্বুকে বলছেন, . --ওগে শুনছো...?(মা) .

   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


--হ্যা বলো (বাবা) . -
-ঘরে যা টাকা ছিলো তা দিয়ে তো ছেলের জন্য নাচতে নাচতে নতুন মোবাইল কিনে এনেছো! তো, সামনে যে কোরবানির ঈদ আসছে, সেটা কি মাথায় আছে তোমার?এক পাঞ্জাবি পড়ে আর কতটা ঈদ পালন করবা হুহ?তোমার কি একটুও লজ্জাসরম নেই?ছেলের জন্য তো লুকিয়ে লুকিয়ে নতুন পেন্ট নতুন শার্ট কিনে রাখছো? নিজের জন্য কিছু কিনবা না? ঈদের বাজারও তো করতে হবে কিছুই তো করা হয়নি, পনেরো হাজার টাকাই তো ছিলো ঘরে, সেই টাকা ছেলের কথা ভেবে সব দিয়ে দিলা?(মা) . -
-চিন্তা করো না,কারো কাছ থেকে ধার করে নিবো। আর ফিরোজ তো এখন বড় হয়েছে, একটা বড় কলেজে পড়াশোনা করে, কত বড়লোক ছেলেদের সাথে মিশতে হয়, তাদের মতন না হলে চলে বলো?(বাবা) .
--তাই বলে সব টাকা খরচ করে ফেলবা?এখন যদি কারো কাছে ধার না পাও? তাহলে কি ঈদেরদিনও চুলা বন্ধ করে রাখবো? . --তুমি অযথা -ই চিন্তা করছো, দেখো কিছু একটা ঠিক ম্যানেজ করে নিবো,আর তাছাড়া আমাদের সবকিছু-ই তো ফিরোজের জন্য, ফিরোজকে না দিলে কাকে দিবো বল? অভাবের তাড়নায় ছেলেকে কিছু-ই দিতে পারি নাই!অনেক কষ্টে বড় হয়েছে আমাদের ছেলে,শুধু একটা মোবাইল -ই তো কিনে দিলাম আর কি দিয়েছি হুহ(বাবা)
আব্বুর কথাগুলো শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেললাম। আজ নিজেকে বড্ড সার্থপর মনে হচ্ছে! এতদিন শুধু নিজের কষ্টটাকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছি! কোনদিনও ভেবে দেখি নাই আব্বু আম্মু আমাকে সুখী রাখতে গিয়ে তারা কতটা কষ্টে আছে! নিত্যকার শুধু আব্বু আম্মুকে ভুল বুঝে আসছি! কিন্তু তারা যে আমাকে এতটা ভালোবাসে তা কখনই আমি বুঝিনি! শুধু নিজে ভালো থাকার জন্য তাদের কে এত কষ্ট দেই আমি!যে বাবা মা আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে!তাদের কে এতদিন আমি অবহেলা করে এসেছি! আজ নিজেকে -ই ছিঃ ছিঃ দিতে মন চাইছে! এতটা সার্থপর কি না আমি?? সত্যি বুকের বামপাশে অনেক ব্যথা অনুভব করছি! ইচ্ছে করছে এখুনি আব্বুকে জড়িয়ে ধরিয়ে একটু কাঁদি!কিন্তু পারছি না, আমার মত সার্থপরের জন্য এটা মানায় না! সেদিন রাতটা কোনরকমে কাটালাম, পরেরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে বেরিয়ে পরলাম কাজের সন্ধানে, পরিকল্পনা আমার উপার্জনের টাকা দিয়ে বাবা মাকে ঈদের কাপড় কিনে দিবো!আর ঈদের বাকি খরচাবলি আমি নিবো। মামার কাছে পড়বো, এই কথা বলে রোজ সকালে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কাজে চলে যেতাম।সকাল বিকাল কাজ করে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় ফিরতাম!! নানি বাড়িতেই আছি ভেবে মা বাবা আমার দুপুরের খাবার নিয়ে চিন্তা করতেন না! সারাদিন কাটিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরলে মা একটু বকা দিতেন!!কিন্তু, আমি কিছু মনে করতাম না!কারণ তখন আমি দিনমজুরি খাটতাম! টানা পনেরোদিন দিনমজুরি খাটারপর চার হাজার টাকা পেলাম!! ঈদের মাত্র আর তিনদিন বাকি আছে, আমি বসেবসে অনলাইনে ক্লাস করছিলাম। এমন সময় আম্মু আসলেন,... আমি আম্মুকে দেখামাত্রই বললাম,... . --আম্মু, তোমরা এই ঈদে কিছু কিনবা না??(আমি) . 

   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


--কি আর কিনবো বাবা, আমাদের তো কাপড় আছেই(মা)
 আম্মু খুব সহজেই কথাটি বলে ফেললেন, আমি অবাক চোখে আম্মুর দিকে তাকালাম! এবং মনেমনে বললাম, মা সত্যি-ই তোমরা খুব সার্থপর!তবে সেটা নিজের ক্ষেত্রে না, আমাকে সবকিছু উজাড় করে দিতে! অতঃপর আম্মু আর কিছু বললেন না! শোবার ঘরে চলে গেলেন! ঈদের মাত্র আর দুইদিন বাকি আছে,কিন্তু, ঈদের কাঁচা বাজারটাও কিছু কেনা হয়নি আমাদের! তাই সকাল সকাল আম্মুকে বলে বেরিয়ে পরলাম! দিনমজুরির চার হাজার টাকা এবং আমার হাত খরচের কিছু জমানো টাকা নিয়ে শপিংমলের ছোট্ট একটা দোকানে ঢুকলাম! তারপর সেখান থেকে পছন্দ করে আম্মুর জন্য সুন্দর একটা শাড়ি কিনলাম! বাবার জন্য কিনলাম একটা পাঞ্জাবি আর লুঙ্গি! নিজের জন্য কিছু কিনলাম না! কারণ আমি জানি বাবা আমার জন্য পেন্ট আর শার্ট কিনে রাখছেন! তারপর বাজারের টুকিটাকি বাজার করতে গিয়ে কখন যে বেলা হয়ে এলো সেদিকে কোন খেয়াল-ই ছিল না আমার! তাড়াতাড়ি বাসার দিকে রওনা হলাম! মা আমার হাতে এতগুলা ব্যাগ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েছেন! আমি কিছু বলার আগেই মা বিস্মিত হয়ে আমাকে বললেন, . --ফিরোজ তুই কোথায় গেছিলি?(মা) . 
-- সব বলবো এখন ঘরে চলো!আব্বু কই(আমি) 
. --ঘরে আছেন(মা) .
 --তাহলে চলো(আমি) . 
আম্মু অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলেন, . --তোর ব্যাগে কি আছে??(মা) .
 --আছে কিছু, আগে তো ঘরে গিয়ে বসি!(আমি) 
 ঘরে গিয়ে আব্বু আম্মুকে নিয়ে একসাথে বসালাম!তারপর ব্যাগ থেকে শাড়িটা খুলে আম্মুর হাতে ঠেকিয়ে দিয়ে বললাম, . --আম্মু দেখো তো শাড়িটা তোমার পছন্দ হয় কি না? আম্মু শুধু অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে আছেন, এবং অজানা আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছেন, . --তুই এগুলো পেলি কোথায়??(মা) . আমি কিঞ্চিত রাগি ভাব নিয়ে বললাম, . --উফফ আম্মু, তুমিও না শুধু প্রশ্ন করো, শাড়িটা দেখে বলো পছন্দ হয়েছে কি না, আর পছন্দ না হলেও কিছু করার নাই, কারণ আমি কোনদিনও এইসব কেনাকাটা করি নাই(আমি) কথাটি বলেই আব্বুর দিকে তাকালাম, উনি সবকিছু মুখ বুজে শুনছিলেন! আমি আরেকটা ব্যাগ থেকে আব্বুর জন্য নিয়ে আসা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবি খুলে আব্বুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললাম, . --আব্বু এই নাও, তোমার জন্য নিয়ে আসা নতুন পাঞ্জাবি আর নতুন লুঙ্গি দেখে বলো পছন্দ হয়েছে কি না?(আমি) . আব্বু একবার পাঞ্জাবি আবার আমাদের দিকে তাকাচ্ছিলেন!কিছুক্ষণ এভাবে করারপর বললেন, --ফিরোজ তুই এত টাকা কোথায় পেলি?(বাবা) . -
-বলতে পারি, আগে বলো রাগ করবা না?(আমি) . 

   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


--ঠিক আছে বল(বাবা) . --
আমি পনেরোদিন ধরে দিনমজুরি কাজ করে ছিলাম, সেখান থেকে চার হাজার টাকা পেয়েছি, আর সেই টাকা দিয়ে তোমাদের জন্য সামান্য কিছু কেনাকাটা করেছি(আমি) কথাটি বলে শেষ করতে পারলাম না, তার আগেই আব্বু প্রচন্ড রেগে গিয়ে আমার গালে কষে একটা চড় বসিয়ে দিলেন! এবং ভয়ংকর হুংকার দিয়ে বললেন, . --খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না?? আমি তোর জন্য মোবাইল কিনে দিয়েছি যেনো তুই মন দিয়ে পড়াশোনা করিস, কিন্তু তুই তা না করে, রোধে পরে কামাই করে আমাদের জন্য নতুন পোষাক কিনে এনেছিস?কেন তোর বাবা কি মরে গেছে? তার কি রোজগার করার শক্তি নেই?তুই কাজ করে খাওয়াতে হবে আমাদের? পড়াশোনা করে আগে নিজের পায়ে দাঁড়া তারপর যতখুশি আমাদের খাওয়াইস! আর যদি কখনো কাজ করিস, আর আমি শুনি, তারপর আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না, দেখে নিস! এই বলে আব্বু রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন! সাথে আম্মুও কিছু না বলে চলে গেলেন!! ভেবে ছিলাম আমার প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে কিনে আনা কাপড় পেয়ে বাবা মা অনেক খুশি হবেন! কিন্তু তার বিপরীত ঘটলো! আব্বু অনেক রেগে গেছেন! সাথে আম্মুও! আমি আর কিছু বলতে পারলাম না! এশারের নামাজ শেষ করে, মন খারাপ করে শুয়ে আছি! তখুনি আব্বু আসলেন,বললেন.. . --ফিরোজ খেয়েছিস (বাবা) .
 --খাবো না, আমার খিদে নেই(অভিমানি স্বরে) . -
-আয় খেতে আয়(বাবা) 

   Post  By -----গল্প ঘর | Golpo Ghor


 কথা না বাড়িয়ে খেতে চলে গেলাম!কারণ আব্বুকে আমি ভয় পাই!কিছু না বলে মুখ বুজে রাতের খাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে আসলাম! বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে ঘুমঘুম ভাব চলে আসলো! রাত তখন ঠিক এগারোটা আব্বু আম্মু দু-জনেই আমার রুমে আসলো,... আব্বু আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় ডাক দিলেন, সাথেসাথে ঘুম চলে গেলো আমার! আমি ধড়ফড় করে উঠে বসলাম! আব্বু আমার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, . --আমার পাঞ্জাবি আর লুঙ্গী দিবি না?? . আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগ থেকে লুঙ্গি আর পাঞ্জাবিটা বের করে আব্বুর হাতে দিলাম! দেখলাম আব্বু পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে কেঁদে ফেললেন, আমি আব্বুকে বললাম, . --আব্বু আমি কি ভুল কিছু করে ফেলছি??(আমি) . --নারে বাবা, তুই কিছু ভুল করিসনি? আজ সত্যি-ই বাবা হিসেবে আমার গর্ববোধ করতে ইচ্ছে হচ্ছে, যে আমি তোর মতন ছেলের একজন বাবা! আজকে আমি অনেক খুশি, যে আমার ছেলের প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে আমাদের জন্য ঈদের কাপড় কিনে এনেছে! তুই তখন জানতে চাইছিলি না? পাঞ্জাবি আর লুঙ্গিটা আমার পছন্দ হইছে কি না? আমি বলছি শোন, এগুলো রেখে সারা বাজার তন্নতন্ন করে খুঁজলেও এর চেয়ে ভালো পছন্দের কোন কাপড় পাবো না আমি!এইগুলা আমার কাছে অনেক দামি রে,অনেক যত্ন করে রেখে দিবো। কারণ, এইগুলা যে আমার ছেলের প্রথম রোজগারের টাকা দিয়ে কেনা! "বলেই বাবা আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন, বুঝদার হওয়ার পর থেকে এই প্রথম হয়তো বাবার বুকে মাথা রাখলাম!তখন চিৎকার করে খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো,আজ দুনিয়ার মাঝে সবচেয়ে সুখি মানুষটা শুধুই আমি! সেদিন থেকে বুঝতে পারছিলাম, আসলে বাবা মা কি জিনিস! তাদের খুশি করতে দামি কিছু লাগে না!এরা অল্পতেই খুশি যদি সেটা ভালোবাসার সংস্পর্শ দিয়ে হয়!সুখে থাকুক এই মানুষগুলি, যারা সারাজীবন নেওয়ার থেকে দেওয়াকেই তাদের খুশি বলে ধরে নেয়! . : . . : .